Saturday, November 2, 2013

তুমি পাখী করে নাও আকাশ


রাতের আকাশটা পড়ে আছে গায়ে কালো চাদর আর চাঁদের মতো শুভ্র ধুতি। দেখতে ঠিক আমার বাবার মতো লাগছে। আমার কথা শুনে দাদা হাসে আর বলে মাথায় দোষ হয়েছে তোর। চাঁদটা আড়াল কেনো আজ? তবুও চাঁদটা মেঘেদের দেখায় সত্যিকারের স্বপ্ন। জানালায় দাঁড়িয়ে খোলা আকাশে হাঁটু মুড়ে চাঁদ না খুঁজে বারান্দার বাহিরে গিয়ে দেখলে চাঁদ আরো বেশী তার দুরত্ব কমিয়ে আনবে পৃথিবী থেকে। এসব আমার দুশচিন্তার ফল। আচ্ছা আমার এসব দুশ্চিন্তার অন্যনাম কি হতে পারে? এর কি কোন জাত ধর্ম আছে?

কি বলতে যে কি বলি আমি আজকাল। আমার আসলে এখন আর ঠোঁটেই কথা আটকায়না। আচ্ছা আমি পাখী হলে কি করতাম? লুকিয়ে শেষ রাতে ঝড়িয়ে দিতাম পথিকের চলার পথে আমার সমস্ত পালক। অথবা হয়ত আকাশের সিঁড়ি বেয়ে যখন খুশী তখন উড়ে যেতাম অনেক উপরে। অভিশাপের জ্বরে আরো বেশী আকাশটাকে ছুঁয়ে দেখার বাসনায় উড়ে যেতাম আমি না ফেরার দেশে। আমি মিনতি করছি আমায় তুমি পাখী করে নাও আকাশ।

তপ্ত পিচঢালা পথ

আমি এবার কার শূণ্য ঘরে যাব
কার বাগানে রংহীন ফুল হয়ে ফুটে রইবো
এই ভরদুপুরে তপ্ত পিচঢালা পথ মাড়িয়ে
কার জীবনে রইবো আবার ক্ষনস্থায়ী হয়ে জড়িয়ে।

আমার ভেতরে হযবরল শব্দগুলো ভুগে নিরন্তর মরণ যন্ত্রনায়
আর লিপ্ত হয়ে আছে বিষন্ন সুন্দর এক আল্পনায়
আমি সৌন্দর্য হারিয়ে নিঃশব্দে অন্ধকারে হেঁটে চলি
আড়াল করে রাখি সব শুন্যতা আর স্বপ্নদের দেই বলি।

আমাকে কেউ জানেনি কেউ বুঝতে চায়নি
আমার সাদা কালোর তফাৎ কেউ ধরতে পারেনি
আমি মিথ্যে আশায় একবার নিজের খোলস বদলে ছিলাম
সময়ের দোলাচলে মিথ্যে কিছু প্রহর কাটিয়ে দিলাম
তোমাকে আর ফিরতে হবেনা তুমি ফিরে এসোনা কোনদিন
আমার স্তব্ধ এ পৃথিবীতে
আমি এক অসমাপ্ত কবিতা হয়ে বেচে রইবো চিরদিন।

ভাবিনি এমনটা হবে

আমি ভাবিনি এমনটা হবে
চাইনি এমনটা হোক
আমি চেয়েছিলাম আরো কিছু বর্ষায় মেঘেরা অঝোরে কাঁদুক
আরো কিছু শরতে কাশফুলগুলো শুভ্রতা ঝড়াক
রুপালী রোদের শুদ্ধিমন্ত্রে স্নান করে সুচি হোক একলা মন
ভীষন পূর্নিমায় জোৎস্নারা শূন্যলোকে একা একা ভেসে বেড়াক
চেয়েছিলাম কেউ যেন আবার পৃথিবীর আরন্যসীমা পেড়িয়ে পাড়ি দিয়ে যায় দুধকুমারী নদীর ধারা
কিছুই হয়নি কিছুই হলোনা
গলে যাওয়া অন্ধকারে বিধবা আঁচল ঢেলে দিয়ে রাতজাগা কুকুরেরা চিৎকার করে তাড়াতে পারেনি শূকনের দলকে
হয়ে ওঠেনি সন্তানের লাশ পোড়াবার সময় মা অতি শোকে পাথর হতে
আমি জানিনা আমার লেখা কোন কবিতার জন্য কেউ কান পেতে আছে কিনা
পৃথিবীর অপর প্রান্তে ব্যক্তিগত শহরতলীতে
একটা সাপের মরাদেহ।।

ইতি জেগে আছো?

- ইতি জেগে আছো?
-হুম আছি। আচ্ছা রাত কতো হল বলোতো?
-কি হবে জেনে?
-আমিও একটু ঘুমাবো।
-ভোরের আর দেরি বেশী নেই।
-সত্যিই দেরি নেই?
-কি হবে জেনে তোমার?
-একটা স্বপ্ন দেখব আজ।
-কিসের স্বপ্ন, সুর্যের আলোর?
-উহু, পাখিদের কলরব।
-ইতি, ঘুমিয়ে পড়।
-ঘুম সব ফুরিয়ে ফেলেছি।
-নির্জনতাই খাও তাহলে।
-একটু নুন পেলেই তো তাই সোনামুখে খাই।
-নুন? ইতি তুমি নুন চাইছ?
-না তো, আমার অন্ধকারই ভালো।
- আমি যাই ইতি আমার অনেক কাজ আছে।
-তোমাকে এবার সত্যিই যেতে হবে?
-যেতে তো হবেই, জীবনতো জীবনের গতিতে চলেই একা।

মৌমাছি

মাথা নীঁচু করে ঘাস ছিঁড়ছি
চারিদিকে গজানো ঝোঁপঝাড়
অবিরাম দল বেঁধে আসে
অশান্তির মতো
একা কেন আসেনা
যদি আসতেই থাকে দলবেঁধে
বেহায়া এক জটিলতা
মাথায় মৌচাক বেঁধেছে
মৌমাছি এবার কোথায় বসিয়েছ
জুয়ার আড্ডা???

আজকাল আমার কবিতা লিখতে লজ্জা হয়

আজকাল আমার কবিতা লিখতে লজ্জা হয়
মাঝে মাঝে আমি কবিতা লিখতে পারিনা
মনের মধ্যে এক অপরাধ বোধ জন্ম লয়
এই আমি এতোকাল বেঁচে ছিলাম যাচ্ছেতাই
জীবন দু'পায়ের তলায় রেখে অপমানে
আমি শুধু ভাবি
আমার আর কিছুই করা হলোনা এবেলা ওবেলা
দিনের পর দিন পার হয় রাতের পর রাত
প্যান্ডুলামে সময় থমকে থাকেনা আর
আমি সত্য বলতে আমরন চিৎকার করে বলি
আমি আমার শাদা চুলের পাশ দিয়ে শাদা চুলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি
আমি আমার বেহায়া জন্মের ব্যাপারে কিচ্ছু জানিনা এখানে খাঁটি মানুষ হয়ে বেঁচে থাকা যায় না।

Friday, June 7, 2013

নিয়ন আলোর শহরে

  


আমার দিকে তাকিয়ে তুমি হাসতে,
আর কী আজব দ্যাখো-
আমাদের বাড়ির ওঠোনটা ভোরে যেমন আলোকিত হয়ে ওঠত,
তেমন আলোয় ভরে ওঠত তোমার সারাটা মুখ;
যেন, রূপকথার চাঁদের বুড়ির জাদু কাঠি ছুঁয়ে দিয়ে যেতো তোমার ঠোঁটে চোখে গালে,-
আমার পৃথিবীতে ভোরের পাখিরা তখন দুষ্টুমি আর খুনসুটিতে মেতে ওঠত!
জানো বাবা, এখনো আমার পৃথিবীতে ভোর নামে, পাখি গায়;
বর্ষার স্যাতস্যাতে অথবা শীতের বিষন্ন ভোর। এমন ভোরে পাখিরা গায় শুধু নিদ্রার গান।

তোমার কড়ে আঙুলে আর অনামিকা লটকে থাকত প্রতিটা সন্ধ্যায়,
আমি হাঁটতাম আমাদের বাড়ির সামনের ঘাসে ছাওয়া রাস্তা দিয়ে,
তুমি রাজকন্যাদের গল্প বলে যেতে...
আচ্ছা বাবা, তোমার রাজকন্যারা কি আজো ডাইনীর মায়াবল কাটিয়ে ওঠতে পারিনি? মরে আছে ঘুমন্তপরীতে? রাজপুত্তুররা বুঝি পঙ্খীরাজ উড়িয়ে জিয়নকাঠি ছোঁয়ায় নি তাদের শিয়রে?
অথচ দ্যাখো, তোমার রাজকন্যা, ইতিমণি, বন্দী আজ জীবনের কারাগারে!
তুমি তো জানো, তোমার আঙুলই জিয়ন কাঠি আমার জন্য-
তাদের মায়াবি ছোঁয়ায় আমি বারবার কতবার জেগে ওঠেছি!
দুঃস্বপ্নে তোমার কড়ে আঙুল কত হাতড়াই আরেকবার জেগে ওঠব বলে,
ঘাটের শলাকা, জানালার শিক ছাড়া কিছুই ঠেকে না হাতে!

আমার পৃথিবীটা ছিলো ওয়ার্ল্ড ডিজনীর বাম্বি, পিনোকী, স্নো হোয়াইটদের নিয়ে গড়া রঙিন রূপকথার মতো,
আর আজ, পাশের বাড়ির মুদির দোকানীর পৃথিবীর মত সাদা কালো...
কেননা, বাবা তুমি, আমার শৈশবের রূপকথার জাদুকর,
নিজেই আস্ত এক রূপকথা হয়ে গেছো।
তুমি কী আর সত্যি মানুষ হয়ে জেগে ওঠবে না, বাবা?
আমি এই নিষ্ঠুর নিয়ন আলোর শহরে একাকি ঘুমিয়ে যে আছি!

আমাদের বাড়ির ওপরে আমার নিজস্ব যে আকাশটা আমাকে দিয়েছিলে একদিন,
কতদিন দেখি নি সে আকাশ!
এখন এই ভিনদেশী আকাশ হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের আড়ালে মুখ ভেংচায়;
আমার আকাশের তারার আলোর নিচে বসে তুমি কতদিন রূপকথা শোনাও না!
এখন সারা শহর নিয়ন আলোয় ভরে থাকে,
এত ঝলোমলো শহরে
বেঁচে আছি আমার আকাশের স্মৃতি নিয়ে,
তোমার স্মৃতি নিয়ে।
হয়তো, একদিন এই নিয়ন আলো
চোখে ঠুলি পরিয়ে ভুলিয়ে দেবে আমার রামধনুর আকাশের স্মৃতি!
সেইদিন কর্পোরেট নিরবতা পালন করব কয়েক মিনিট,
এবং, ক্ষমা করো বাবা,
তোমার স্মৃতির ভার আর সইতে পারছি না।
 
-অপরিচিত মানবী
০৬/০৫/১৩