Saturday, April 13, 2013

অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠি

ছোটবেলায় আমি আর আমার ছোড়'দা বিকেল হলেই রেইস খেলতাম| বিশাল সেই খোলা মাঠে আমরা দুজন ছুটতাম| দাদা বলত দেখব কে আগে ছুটে দেয়াল ছুঁতে পারে| দাদার সাথে আমি পারিনি কখনো| আমি পিছে পড়ে থাকতাম আর দাদা কত সামনে| দাদা আমাকে হারাতে পেরে খুব হাসতো| আমি মন খারাপ হলেও দাদাকে না বলে বলতাম আমিও একদিন ছুঁতে পারবো দেয়ালটা| ছুটে হয়রান হয়ে গেলে দুজন বসে পড়তাম| বসে বসে দু'ভাই-বোন গল্প করতাম| গল্পের বিষয় হতো মা যদি কোথাও টাকা লুকিয়ে রাখে সেটা আমাকে খুঁজে বের করে দাদা কে বলতে হবে| আমি খুব রেগে গিয়ে বলতাম আমি পারবো না ভাগ| দাদা আরো রেগে গিয়ে বলত আর কোনদিন বলিস প্রজাপতি ধরে দিতে| এটা শুনেই চুপসে যেতাম| দাদার হাত ধরে মুখ কালো করে বলতাম রাগ করিস না দাদা| আচ্ছা যা বলব তোকে|

প্রজাপতি ছিল আমার কাছে স্বপ্নের কিছু| প্রজাপতি দেখবার লোভে দাদার কত অদ্ভুত আবদার পূরণ করেছি| প্রজাপতি ধরবার জন্য তার পেছনেও ছুটেছি কতো। আমি ভাবতাম একদিন আমি প্রজাপতির চেয়ে আরো দূরে উড়ে যেতে পারবো । উড়ে যাওয়াতো দূরের কথা, কখনো ছুয়েও দেখতে পারিনি এই আমি| দাদার হাত থেকে দেখতাম| আর রাতে স্বপ্নে সেই প্রজাপতির সাথে উড়ে বেড়াতাম|

স্বপ্নের মত উড়ে বেড়ানো হয়নি কখনো| জীবনের দৌড়ে আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি । কিন্তু আমি দৌড়াতে পারিনা বাকি সবার মতো । আজকাল আমার সব গতি কেমন যেন থেমে আসছে । মনে হচ্ছে সবাই আমাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে । আর আমি শুধু এক জায়গায় স্থির দাঁড়িয়ে দেখছি আর দেখছি । আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, আমি ভীষণ অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠি ।
 

-অপরিচিত মানবী
০৪/১৩/১৩

No comments:

Post a Comment