Tuesday, May 28, 2013

অপূর্ণতায় পূর্ণতা

সকালে কাজে যাবার সময় অন্ময় কোলে এসে বসে পড়ল। 'এখন যে আমার বাবাটা কোলে উঠলো, পিসি কাজে যাবনা?' অন্ময় যখন আরো জড়িয়ে ধরে কোলে শুয়ে ছিল, মনে হলো, বাবা যেন আমাকে জড়িয়ে ধরে বলছে, 'ইতি মনি, এখন শান্তিতে একটু ঘুমাই।'

কাজে বসে কাজ করব কি- ফোন বেজেই চলছে! এর মধ্যে রায়ানা এসে পাশে বসে বলল, 'কালকে ২২শে শ্রাবণ হবে তোর।' আমি মুখ গম্ভীর করে ভাব মেরে বললাম, বুড়ি হয়েই গেলাম? রায়ানা বলল, 'ঠিক বয়েসে বিয়ে করলে দু' বাচ্চার মা হইতি!' বলে কী এই মেয়ে! মজার ছলে খাঁটি সত্যি কথারে বাবা। 'চিন্তায় ফেললি দেখছি!' রায়ানা উঠে যাবার সময় বলল, 'চিন্তা কর।' আমি চিন্তিত হয়ে কিছুই পেলাম না।

আচ্ছা, গত বছর কি আমি জন্মদিনে ঘরে ছিলাম? ধ্যাত্‍ কচু! মনে নাই। কাল আপুকেই জিজ্ঞেস করে নিব। ২১শে তে প্রেম ছিল। প্রেমিক! আরে হ্যা, মনে পড়েছে- সে ছিল বিশাল প্রেমিক। লেখা ছিল তার জীবন আর নারী ছিল তার দুজন। একজন বই মেলায় আরেকজন মুঠোফোনে। আমি গাধী মিনতি করি কথা বলার। হায় পিজা প্রেম হায়! আমি ঘরেই ছিলাম সেবার।

আমি কখনো চাইনি আমার জন্মদিনে কেউ শুভ জন্মদিন বলুক। লোভী মেয়ে তাই আজকে সবচে আপনজনদের (হাসান মাহমুদ ভুস্কার কল) পেয়ে খুশিতে কাঁদলাম। জীবনে এত বড় সারপ্রাইজ কোনদিন পাইনি। আবার বড় ভাই ভোম্বল দাসের বকবকানি ভালবাসা। আহা তার ঢং! 'বুবু, একটা কথা শুনলাম তোর নামে।' মানুষ এত ঢং ক্যামনে করে ভাইয়া? কিঙ্কর আহসান বলছি। অরেও আমি ঢং করে একটু কান্না করে শুনলাম। ভোম্বল ভাইয়া তুই একটা ঢং! ঢংএর চোটে বাঁচিস না। আবার মেহেদী। এই পোলা একটা বেয়াদব। সারাদিন নেটে থাকব আর ঘুমানোর আগে ডাক দিয়ে বলবে, 'তাইরীন'। মন চায় কানের মধ্যে দেই। কি বুঝে সারাদিন আজকে বক বক করে গেল।

এত আনন্দ চাইনি আমি। বাংলাদেশের সময় ভোর রাত ১২টা থেকে মুঠোফোনে চেয়ে আছি। অপেক্ষা। আমার সকাল কেটে বিকেল এলো বিকেল গড়িয়ে রাত পোহালো মুঠোফোনে আর কল এলোনা। আসবে না।

বারান্দায় দুটো চেয়ার। একটা আমি, আরেকটাতে বাবা- পাশাপাশি বসে আছি। বাবার সম্মুখে আমি চেয়ে আছি। পুরোনো সেই হাসি ঝুলিয়ে সামনে বসে আছে। যে হাসিতে পরম নিশ্চয়তা। 'বাবা তুমি ভালো আছ? এবার দেরী করে এলে যে? বাবা এবারের জন্মদিনে বন্ধুরা সবাই ভালবাসা দিল। তুমি কী দিবে?' বাবা গম্ভীর হয়ে চেয়ে আছেন; হাত দুটো চেপে ধরে বললেন, 'তোদের মা ব্যস্ত, রাগ করে না ইতিমনি।'

তাই হবে বাবা। রাগ অভিমান বিসর্জন দিলাম। তবুও তুমি এসো। আমি সব কথা শুনব বাবা। তুমি এসো। অপূর্ণতায় পূর্ণতা এনে যাও বাবা।

-অপরিচিত মানবী
০৫/২৭/১৩

No comments:

Post a Comment