Tuesday, May 28, 2013

সাম্প্রতিক সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রেস মিডিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা উচিত্‍


একটা কথা ইদানীং প্রায়ই শোনা যায় তা হচ্ছে, পৃথিবী অনেক ছোটো হয়ে আসছে। কেননা এই স্যাটালাইটের যুগে পৃথিবীর এক প্রান্তে কিছু ঘটামাত্র অপরপ্রান্তের টিভি স্কিনে লাইভ দেখা সম্ভব হয়ে গেছে; শুধু ঘটনা দর্শন করিয়েই ক্ষ্যান্ত নয় মিডিয়া, তথ্যপ্রচার বিচার বিশ্লেষণ ইত্যাদির যাঁতাকলে সমস্ত ঘটনাই মনে হয় আমাদের চোখের সামনে ঘটছে; ঘটনার শাঁস সুদ্ধ গিলিয়ে খাওয়ানোর কাজটা মিডিয়া চমত্‍কারভাবেই করে থাকে। প্রিন্ট মিডিয়াগুলো সাথে সাথে সংবাদটি অবগত করতে না পারলেও, সংবাদটিকে কাগজের বুকে স্থায়ী করে রাখে। থাকে বিজ্ঞ বিশ্লেষণ আলোচনা সমালোচনা। তাই মিডিয়ার প্রতি মানুষের যে অন্ধ একটা বিশ্বাস জন্মে গেছে তা অস্বীকার করার কিছু নেই। তারা যখন যা ই প্রচার করে মানুষ প্রাথমিকভাবে বিচার ছাড়াই তা বিশ্বাস করে ফেলে। এই সুযোগে মিডিয়ায় জন্ম নিয়েছে হলুদ সাংবাদিকতা। তারা বিশেষ মহলের নির্দেশে বিশেষ স্বার্থে যেকোনো ইস্যুতে চারদিকে প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে তাদের স্বার্থ উদ্ধার করে। তাদের প্রচারিত খবরগুলো মিডিয়ায় আসার পর একদল অসচেতন নাগরিক সেগুলো যাচাই বাছাই ছাড়াই গিলে ফেলে; ফলে দেশের বিরাট এক অসচেতন গোষ্ঠি এইসব প্রপাগান্ডা সত্য মনে করে ঐসব স্বার্থোন্বেষি মিডিয়াগোষ্ঠীর ফাঁদে পা দেয়। উদাহরণ স্বরূপ, দিগন্ত টিভি নয়াদিগন্ত আমার দেশ পত্রিকা জামাতিদের মুখপত্র হবার কারণে লাগাতার মিথ্যে বানোয়াট তথ্য পরিবেশ করে দেশের মানুষের মাঝে স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী বীজ বপন করে যাচ্ছে ফলে দেশে স্বাধীনতা চেতনাবিরোধী চেতনা শক্তিশালী হয়ে ওঠছে। তাদের ফাঁদে পা দিয়ে দেশে অসচেতন অর্ধশিক্ষিত অশিক্ষিত জনগণ দেশবিরোধী যেকোনো চেতনা অন্তরে ধারণ করে বেড়ে ওঠছে এবং বয়স্করা তরুণদের মাঝে ঐ বীজ বপনে সহযোগিতা করছে। যেহেতু সত্য মিথ্যে যাচাই করার মত বিবেক শিক্ষা সচেতনতা দেশের এইসব জনগণের নেই সুতরাং সরকারের উচিত্‍ একটা মনিটরিং বোর্ড গঠন করে সংবাদমাধ্যমটি নিয়ন্ত্রণ করা, যাতে ক্ষতিকর তথ্য দেশে ছড়াতে না পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে যে সহিংসতা অরাজকতা পরিলক্ষিত হচ্ছে তার জন্য দায়ী গণমাধ্যমগুলো।
যুদ্ধোপরাধীদের ফাঁসির দাবি বাংলার প্রাণের দাবি। বর্তমান সময়ে বিচারের আওতাধীন অপরাধীরা দাগি চিহ্নিত অপরাধী। অথচ কাদের মোল্লার ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবন রায় হলে সংক্ষুদ্ধ দেশপ্রেমিক তরুণেরা রাস্তায় নেমে আসে এবং শাহবাগে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য অবস্থান নিলে দিগন্ত টিভি আমার দেশ সহ জামাতি ঘরানার পত্রিকা এই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু এবং শাহবাগে অবস্থানরত তরুণ তরুণীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কাল্পনিক অভিযোগ উত্থাপন করে তা প্রচার করতে থাকে। প্রথমে এই আন্দোলনকে সবাই যাতে গুরুত্ব না দ্যায় তার জন্য এটাকে আওয়ামী লীগের নাটক বলে প্রচার করতে লাগল। কিন্তু পরবর্তীতে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত গণজাগরণ দেখে ভয় পেয়ে তরুণ তরুণীদের বিরুদ্ধে মিথ্যে বানোয়াট তথ্য প্রচার করতে লাগল। ফটোশপে ছবি এডিট করে প্রচার করতে লাগল যে শাহবাগের তরুণ তরুণেরা নষ্ট প্রজন্মের সংস্কৃতিহীন প্রতিনিধি! যেমনঃ
* শাহবাগীরা নাস্তিক, যেন যুদ্ধোপরাধীদের বিচার চাওয়া মানেই নাস্তিকতা।
* তারা ঐখানে সারা রাত ড্রাগস নেয়
* ছেলে মেয়ে একসাথে অবস্থান করার কারণে তারা নিশ্চয় শারীরিকভাবেও মিলিত হয়!
* তারা ইসলাম বিদ্বেষী
* তারা আওয়ামী লীগের পেইড দালাল!
* টাকা আর খাবার ছড়িয়ে আন্দোলনকে টিকিয়ে রাখা হয়েছে!

এইসব প্রপাগান্ডা ছড়ানোর ক্ষেত্রে প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রিক মিডিয়ার পাশাপাশি ফেইজবুকে 'বাঁশেরকেল্লা'র মত পেইড পেইজগুলোও কম দায়ী নয়। তাদের এইসব প্রপাগান্ডা ছড়ানোর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, যাতে মানুষ ভাবতে পারে, শাহবাগে যারা অবস্থান করছে এবং তাদের এই আন্দোলনটা আসলে- উচ্ছ্বন্নে যাওয়া বখাটে বিবেকহীন মাতাল নষ্ট তরুণ তরুণীদের ইতরামি বৈ কিছু না! দেশের মানুষদের উচিত্‍ সেটাকে সাপোর্ট না দিয়ে বরং কঠোরভাবে প্রতিহত করা...
ফলে, দেশে অনেক ধর্মবিশ্বাসী অসচেতন আর অশিক্ষিত লোকেরা এগুলো সত্য মনে করে শাহবাগের উপর থেকে তাদের সমর্থন তুলে নেয় এবং শাহবাগের তরুণ তরুণীদের দিকে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকাতে থাকে। দেশে যে অংশটি ধর্মপ্রাণ কিন্তু এইসব ব্যাপারে নীরব ছিল তাদের মাঝে জঙ্গিবাদ উস্কে দিয়ে সারাদেশে তান্ডব চালাতে থাকে এবং জন্ম নেয় 'হেফাজতে ইসলাম' নামক ভূঁইফোড় সংগঠন। তারা জামাত শিবিরের সহায়তায় সারা ঢাকায় যে তান্ডব চালায় তার দাগ আজো শুকোয়নি। এইসবের পূর্ণ সুযোগ নিয়েছে জামাত-বিএনপি। চট্টগ্রাম সহ কয়েক জায়গায় অসহায় সংখ্যালুঘদের উপর তাদের পাশবিক আচরণ তাদেরকে উদ্বাস্তু নিঃস করে দিয়েছে।

"মায়ের লাঞ্ছিত বুকে শকুন নখের দাগ...
কে পেরেছে ভুলে যেতে কবে?
ধর্ষিতা বোনটির বিভীষিকা মাখা চোখ আমায় জাগিয়ে রাখে, ডেকে বলে,
মনে রেখো এদিনের শোধ নিতে হবে!!
যদি বল ঘৃনাবাদী, দ্বিধাহীন মেনে নেব তাও..."

তাই সরকারের উচিত্‍ সংবাদ মাধ্যমগুলোর নিয়ন্ত্রণ রাখা। মনিটরিং কমিটি গঠন করে প্রেস মিডিয়াকে মনিটর করা এবং সে মত কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া। এইখানে 'নিরপেক্ষতা' ব্যাপারটিকে ইগনোর করে কঠোর হস্তে সকল প্রকার প্রপাগান্ডা দমন করতে হবে। মনে রাখা উচিত্‍,
"ন্যায় এবং অন্যায়, দুইটার মধ্যে মাঝামাঝি কোন অবস্থান বলে কিছু নাই। মাঝামাঝি থাকা মানেই অন্যায়কে সাপোর্ট করা। নদীর দুইপারের যেকোন একপারেই আপনাকে থাকতে হবে, মাঝামাঝি থাকতে চাইলে হয় ডুবে যাবেন, অথবা ভাসতে ভাসতে যেকোন একপারেই আবার ভিড়বেন।"

তবে, সহিংসতা এড়াতে এবং স্বাধীনতার চেতনাবিরোধীকে প্রতিহত করতে সরকার যেন সকল প্রকার সমালোচনার গলা টিপে না ধরে এই দিকেও খেয়াল দেওয়া অত্যন্ত জরুরী। তাহলে হিতে বিপরীত হবে। মুক্তকন্ঠের আওয়াজ রোধ করা স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী। সবকিছুর সমালোচনা থাকতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। মনে রাখতে হবে, প্রপাগান্ডা আর সমালোচনা এক জিনিস নয়।

No comments:

Post a Comment